1. sm.khakon@gmail.com : bkantho :
শিশুদের কাঙ্খিত আচরণের গুণগত পরিবর্তনে অংশীজনদের করণীয় - বাংলা কণ্ঠ নিউজ
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:০০ অপরাহ্ন

শিশুদের কাঙ্খিত আচরণের গুণগত পরিবর্তনে অংশীজনদের করণীয়

মোঃ হাসিবুল ইসলাম
  • শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৬৫৫ বার পড়া হয়েছে
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ও শিশুদের কাঙ্খিত আচরণের গুণগত পরিবর্তনে অংশীজনদের করণীয়

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ও শিশুদের কাঙ্খিত আচরণের গুণগত পরিবর্তনে অংশীজনদের সাথে ওতপ্রোতভাবে প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করার ফলে শিশুদের গুণগত পরিবর্তনে তাঁদের মনের চাওয়া অবলীলায় প্রকাশ করেন। চাওয়া একটাই সন্তান যেন মানুষের মতো মানুষ হয় অর্থাৎ দেশ ও দশের সেবার জন্য যোগ্য হয়ে উঠে। শিশুদের গুণাবলির বিকাশ ঘটিয়ে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলতে বিদ্যালয়ের গুণগত পরিবেশ, বিদ্যালয়ে শিশুর নিয়মিত উপস্থিত প্রয়োজন। বিদ্যালয়ের গুণগত পরিবেশ বজায় রাখতে, নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ও মানসম্মত শিশু অর্থাৎ শিশুর যৌক্তিক গুণাবলির বিকাশে শিক্ষকগণ ছাড়াও অংশীজনদের সহযোগিতা ব্যাপকভাবে উপলব্ধ হয়।

অংশীজনদের চাওয়ার বাস্তবে রূপদানের প্রাতিষ্ঠানিক যে প্রতিষ্ঠান, তার নাম হলো বিদ্যালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে ৫+ হতে ১০+ শিশুদের নিয়ে বয়সভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক হতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকগণের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে অর্গানাইজড লার্নিং পরিচালিত হয় এবং বয়স ভিত্তিক যোগ্যতা অর্জনে নিবিড়ভাবে শিক্ষকগণ কাজ করেন। এছাড়াও বর্তমানে ৪+ শিশুদের নিয়ে প্রত্যেকটি ক্লাস্টারে ১টি করে বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিকের পাইলটিং কার্যক্রম চলমান।

বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়নে এবং শিক্ষার্থীদেরকে মানসম্মত শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তোলতে সহায়ক ভূমিকা হিসেবে বিদ্যালয়ের অংশীজন তথা শিক্ষার্থীদের মা-বাবা, বড় ভাই বোন, প্রতিবেশীগণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বিদ্যালয়ের অংশীজন বলতে বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকায় বসবাসকারী সকল নাগরিককে বুঝায়। নাগরিকদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থী তথা শিশুর মা-বাবা, বড় ভাই-বোন, প্রতিবেশী, ক্যাচমেন্ট এলাকায় স্থাপিত বিভিন্ন ধরণের সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ।

বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ১ জানুয়ারিতে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে বই বিতরণ উৎসবের মাধ্যমে। প্রতিবছর ১৫ ডিসেম্বর হতে ৩১ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাচমেন্ট এলাকার সকল শিশুর শতভাগ ভর্তির জন্য চলে শিশু জরিপ ও ভর্তি কার্যক্রম। ব্লক ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ আন্তরিকভাবে শিশুজরিপ সম্পন্নপূর্বক শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে উপবৃত্তিসহ ইউনিক আইডির যাবতীয় সেবা প্রাপ্তির নিমিত্ত শিশুর জন্মসনদ থাকা জরুরি। জন্মসনদ নিশ্চিতকরণে কাজ করে ইউনিয়ন পরিষদ। ইউনিয়ন পরিষদে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের জন্য ওয়ার্ডের বসবাসকারী নাগরিকদের প্রত্যক্ষ নির্বাচিত প্রতিনিধি অর্থাৎ ওয়ার্ড মেম্বার থাকে যিনি পদাধিকারবলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য। বিদ্যালয়ে শিশুর ভর্তির জন্য জন্মসনদ সঠিক সময়ে নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার সচেতনতা সৃষ্টি করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এছাড়াও শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করণে ব্লক ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকগণের সাথে সমন্বয় করে উঠান বৈঠক করে শিক্ষার গুরুত্ব আলোকপাত করে অভিভাবকগণকে শিশুর ভর্তি নিশ্চিত করতে এবং বিদ্যালয় নিয়মিত পাঠাতে উৎসাহিত করতে পারে। আর এ কাজের জন্য পাড়া/মহল্লা ভিত্তিক তদারককারী টিম গঠন করতে পারেন।

ইউনিয়ন চেয়ারম্যানগণ যেহেতু ইউনিয়ন পরিষদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে আবশ্যিকভাবে প্রতিবছর ডিসেম্বর ও জানুমাসে আবশ্যিকভাবে শিশুদের বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তি ও নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে কয়েকটি সভা আয়োজন করে গৃহিত সিদ্ধান্ত সমুহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বারগণ ওয়ার্ডে অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে সমন্বয় করে বাস্তবায়ন করতে পারেন এবং প্রতিবছর প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ক্যাটেগরিতে নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করতে পারেন যার কারণে কাজের স্বীকৃতি বাড়বে ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হবে।

এছাড়াও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সম্মানিত সদস্য হিসেবে বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়নে বিদ্যালয়ের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত ফান্ড হতে বরাদ্দপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে। প্রতিমাসের বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় উপস্থিত থেকে বিদ্যালয় পরিবেশ উন্নয়নে ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণকে(মা-বাবা) বিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায়(রাতে) পড়তে বসে কি না মাঝে মাঝে খোজ খবর নিতে পারে।

শিশুর কাঙ্ক্ষিত আচরনের গুণগত পরিবর্তনে মা-বাবার ভূমিকা অনেক। মা হলো শিশুর প্রথম শিক্ষক। শিশুর নৈতিক গুণাবলির চরম উৎকর্ষ সাধন হয় মা-বাবা তথা পরিবারের মাধ্যমে। তাই বিদ্যলয়ের শিক্ষকগণের পাশাপাশি শিশুর নৈতিক গুণাবলির উৎকর্ষ সাধনে পরিবারকে ভুমিকা রাখতে হবে। শিশুদেরকে সহনশীলতা, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ছোটদেরকে ভালোবাসতে শেখাতে হবে এবং খেলাধুলায় পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে এবং সেই সাথে শিশুদের ইতিবাচক কাজে প্রশংসা ও নেতিবাচক কাজে নিরুৎসাহিত করে তার কুফল বুঝাতে হবে। বড়দের পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখতে হবে।

মা-বাবা সন্তানকে পড়াশোনার তাগিদ দিবেন। রাতে পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করে দিবেন। প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন খাতা, কলম যোগান দিবেন। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার/শনিবার হাত ও পায়ের নখ পরিষ্কার(কাটা) নিশ্চিত করবেন। সময়মতো বিদ্যালয়ে পাঠাবেন। শিক্ষকগণের সাথে যোগাযোগ রাখবেন। মা ও অভিভাবক সমাবেশে আবশ্যিকভাবে উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিবেন ও সভার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন। সন্তান যেন খারাপ সঙ্গ/অভ্যাসে আসক্ত না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

প্রতিবেশিরা নানাভাবে শিশুদেরকে আদর্শ শিশু/শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তোলতে পারে। অন্যের সন্তানকে নিজের সন্তান ভেবে স্কুল ফাঁকি দিতে/স্কুল সময়ে খেলায়/বদ অভ্যাসে দেখলে তৎক্ষনাৎ বুঝিয়ে নিবৃত করে সর্বশেষে প্রকৃত অভিভাবককে(মা-বাবা) অবগত করলে শিশুরা প্রতিবেশীদেরকে অভিভাবক হিসেবে মনে করবে এবং স্কুল ফাঁকি দেওয়ার কোন সুযোগ পাবে না। এভাবে দায়িত্ব পালন করলে সমাজে বসবাসকারী নাগরিকদের মধ্যে শান্তি শৃঙ্খলানবজায় থাকবে ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হবে। শিশুদেরকে যেন শিশুশ্রমে বা বিদ্যালয়ের সময়ে পিতা মাতার কাজে সহযোগিতার নিমিত্ত ব্যবহার না করা হয়, সে বিষয়ে প্রতিবেশিগণ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলতে পারে।

বিদ্যালয়ের অ্যালামনাইয়ের স্বাবলম্বী সদস্যরা বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়নে এবং গরিব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ যেমন খাতা, কলম ও স্কুল ড্রেস সরবরাহ করে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।

বিদ্যালয়ের ব্লক ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ পদ্ধতিগত পাঠদানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্লকের সকল শিক্ষার্থীর ভর্তিসহ নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কার্যকর প্রয়োজনীয় সংখ্যক হোমভিজিট ও উঠান বৈঠক করলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে ও ঝড়ে পড়ার হার শূণ্যের কোঠায় আসবে এবং একই সাথে প্রধান শিক্ষককে ব্লকের শিক্ষার্থীদের অবস্থার আপডেট জানাবেন এবং ওয়ার্ড মেম্বারের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করবেন।

প্রধান শিক্ষক SWOT Analysis করে বিদ্যালয়ের পরিবেশ তথা অবকাঠামো উন্নয়নে, শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে, শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মা/অভিভাবক সমাবেশ আয়োজন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে পারেন যার কারণে সমন্বয় সাধিত হবে এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এভাবেই বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ও শিক্ষার্থীদের কাঙ্খিত আচরণে গুণগত পরিবর্তনের ব্যাপক ভুমিকা রাখবে ও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

লেখকঃ

মো: হাসিবুল ইসলাম
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার
আজমিরীগঞ্জ, হবিগঞ্জ
০১৭১০৯৪৪৯৮৪

সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
Developer By Zorex Zira

Designed by: Sylhet Host BD